Site icon Jamuna Television

বিউটি অফ ডেভিল (পর্ব ২)

হোসাইন শাহীদ
দল গঠনের পর শেষ পর্যন্ত সিদ্ধান্ত হলো যাবো ভারতের শিমলা মানালি। হিসেব করে দেখা গেলো মানালি গেলে সময় লাগবে দশ দিনের মতো। সবাই চাকরি করি এতোদিন ছুটি পাবো কিনা এনিয়ে চললো এক দফা আলোচনা, শেষে ঠিক করা হলো যাবো দার্জিলিং। কিন্তু খবর পাওয়া গেলো দার্জেলিংয়ে খোরখাদের আন্দোলন চলছে। আমরা হতাশ, কি করা যায়, কি হবে এখন।

এরই মধ্যে ফেসবুকের একবন্ধু লাদাখের পেংগংলেকে ছবি দিলো। ছবি দেখে আমাদের সবার চোখ কপালে, এতো সুন্দর যায়গা !!! এখানে না গেলে জীবনই বৃথা। হই হই পড়ে গেলো আমাদের মাঝে, এখানেই যাবো। সময় কোন ব্যাপার না। যতদিন লাগে লাগুক। যাবো লাদাখ।

পরে সিদ্ধান্ত হলো কোন এজেন্সি নয় যাবো নিজেরাই। শুরু হলো গবেষণা। এই সেলের দায়িত্ব নিলো আকঞ্জি ও মাহমুদ। একমাস ধরে চলে গবেষণা। গবেষণা এতো নিখুঁত হয়েছে যে, আলাপ আলোচনার সময় আকঞ্জি ও মাহমুদ লাদাখ যাত্রার বিভিন্ন জায়গা বা রাস্তা নিয়ে কথা বলে, শুনে মনে হয় ঐ সব সড়কের মোড়ে মোড়ে বিভিন্ন চা স্টলে বসে তারা প্রায়ই আড্ডা দেয়। সব চেনে। মাহমুদতো বলেই বসলো, বন্ধু আমার শরীরটা বাংলাদেশে আর বাকি সব লাদাখ চলে গেছে। মাহমুদের এই আত্মবিশ্বাস আমাদের শক্তি যোগাচ্ছিলো।

তবে আমাদের এই গবেষণা, উত্তেজনা কোন কিছুই একজনকে স্পর্শ করেনি তিনি হলেন সেই নকশাবিদ বন্ধু সাগর। সে তার কাজ করে যাচ্ছে মনযোগ দিয়ে। যে কোন বিল্ডিংয়ের নকশা করার আগে সিড়ির নকশা ঠিকমতো করছে।

যাইহোক এর মধ্যে সবাই পাসপোর্ট করলাম। অবশেষে ভ্রমণের পরিকল্পনা ঠিক ঠাক হলো। বাংলাদেশ থেকে বাসে যাবো কলকাতা। কলকাতা থেকে বিমানে শ্রীনগর । শ্রীনগর থেকে লে যাবো বাসে। পরিকল্পনা শেষে শুরু হলো পাঁচ বন্ধুর লাদাখ যাত্রা।

হোটেলে নাস্তার টেবিলে রীতিমতো ঝড় বইছে। বসে আছি ঢাকার মোহাম্মদপুর শ্যামলি বাস কাউন্টারের পাশের হোটেলে। সকাল সাড়ে আটটায় বাস ছেড়ে যাবে। দীর্ঘ পথ যেতে হবে, দুপুরের আগে খাওয়া হবে না। তাই সবাই পেট ভরে খেয়ে নিচ্ছি। রুটি, মাংশ, ডিম, চা।


খেতে খেতে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তটি নেয়া হলো নাস্তার টেবিলে। খরচ খুব হিসেব করে করতে হবে। অযথা খরচ করা যাবে না। বিশেষ করে খাওয়া দাওয়ায় বেহিসাবি হওয়া চলবেনা।

কমলাপুর থেকে ছেড়ে নির্ধারিত সময়ের কিছু পরে আসলো বাস। ঢাকা থেকে কলকাতা টিকিটের দাম সতেরাশ টাকা। এক বন্ধুর কল্যাণে কিছু ছাড় পাওয়া গেছে। একে একে উঠে পরলাম সবাই। আমার পাশে বসেছে সাগর। পিছনে আকাশ ও মাহমুদ, তাদের পাশে আকঞ্জি। বাসে উঠার পরই বোঝা গেলো আজকে অতিরিক্ত খেয়ে ফেলেছি। সাগরতো রীতিমতো ঢেকুর তুলছে।

বাস ছেড়ে দিলো। সবার মন খুব ভালো। যাচ্ছি স্বপ্নের জায়গায়। এখন ঢাকার রাস্তায় যানজট দেখতেও আমাদের ভালো লাগছিলো। মনে হচ্ছিলো আহা কি অপূর্ব দৃশ্য, কতো সুন্দর সুন্দর গাড়ি দাড়িয়ে আছে। হঠাৎ দেখি বাসের সুপারভাইজার বাস যাত্রীদের একটি করে প্যাকেট আর পানির বোতল দিচ্ছে। আমরা সবাই চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে রইলাম। নাস্তার প্যাকেট !!!!!


আসলে আমরা জানতামই না শ্যামলি বাস সার্ভিস তাদের যাত্রীদের জন্য নাস্তা ফ্রি সরবরাহ করে থাকে। বাস চলছে আমরা হাতে নাস্তার প্যাকেট নিয়ে বসে আছি। ঐ প্যাকেট থেকে কোন কিছু খাওয়ার সাধ্য আমাদের কারো নেই। পাশেই দেখি এক দম্পত্তি যাচ্ছে। স্বামী তার স্ত্রীকে নিজ হাতে খাওয়াচ্ছে আর বলছে কিগো খাবার কেমন? স্ত্রীর উত্তর এতো চমৎকার খাবার অনেকদিন খাইনিগো। বার বার হর্ন বাজাচ্ছে বাস চালক। তাকিয়ে দেখি যানজটে আটকে আছি। মেজাজটাই বিগরে গেলো। দেশের কিছু হবে না, এতো যানজট কোন শহরে থাকতে পারে রাবিশ।

চলবে…..

Exit mobile version