Site icon Jamuna Television

‘কুকুর’ ‘জানোয়ার’ বলে ডাকে: সৌদিতে নিষ্ঠুরতার বর্ণনা দিলেন ইথিওপিয়ান অভিবাসীরা

সৌদি আরবের দক্ষিণ সীমান্ত এলাকায় তায়িব মোহাম্মদকে গ্রেফতার করে সৌদি পুলিশ। ইথিওপিয়ান এই মধ্য বয়সী ব্যক্তি ইয়েমেন হয়ে সৌদিতে অনুপ্রবেশের চেষ্টা করছিলেন। একটা জঙ্গলের ভেতর দিয়ে ৫ দিন ধরে হেঁটে সৌদি সীমান্তের পৌঁছান। ধরা পড়ার পর পুলিশ তার সাথে কেমন আচরণ করেছিলো

সে বিষয়ে দ্য গার্ডিয়ানকে সাক্ষাৎকার দিয়েছেন তিনি। ‘ওরা আমাকে বললো গায়ের সব কাপড় খুলে ফেলতে। এরপর আমার কাছে থাকা সবকিছু নিয়ে নিল। ফোন, কাপড়চোপড়, টাকা- সবকিছু। এবং আমার সামনেই সবকিছু পুড়িয়ে দিলো।’

তায়িব এখন ইথিওপিয়ায় ফিরে গেছেন। সৌদি পুলিশই তাকে ফেরত পাঠিয়েছে। ঘটনার কয়েক সপ্তাহ পরে আদ্দিস আবাবায় বসে ব্রিটিশ পত্রিকাটিকে সাক্ষাৎকার দিচ্ছিলেন তিনি। তায়িব একা নন। গত কয়েক বছরে এমন কয়েক লাখ ইথিওপিয়ানকে দেশে ফেরত পাঠিয়েছে সৌদি ইমিগ্রেশন পুলিশ।

আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার সর্বশেষ তথ্য মতে, ২০১৭ সালের পর থেকেই শুধু ৩ লাখ ইথিওপিয়ানকে দেশে ফেরত পাঠানো হয়েছে। তাদের বেশিরভাগই সৌদি আরবে অবৈধভাবে প্রবেশ করেছিলেন, অথবা অবৈধভাবে বাস করছিলেন।

সৌদি আরবীয় কর্তৃপক্ষ গত কয়েক বছর ধরে বিভিন্ন দেশীয় শ্রমিকদেরকে গণহারে দেশে ফেরত পাঠানোর অভিযান শুরু করেছে। প্রতিদিন বিমানভর্তি প্রবাসীকে নানান গন্তব্যে ফেরত পাঠানো হয়। এই ফেরত পাঠানোর প্রক্রিয়ায় শ্রমিকদের সাথে নজিরবিহীন নিষ্ঠুরতা চলে বলে ভুক্তভোগীরা বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থা ও সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন।

গ্রেফতারের পর ফেরত পাঠানোর আগে যেসব কারাগারে রাখা হয় সেখানে গার্ডরা অমানবিক আচরণ করেন। এতে অনেকে অসুস্থ, কপর্দকহীন অবস্থায় নিজ দেশে ফিরেন। কারো কারো গায়ে বুলেটের জখমও পাওয়া যায়।

নাম উল্লেখ না করার শর্তে একজন মানবিক সহায়তাকর্মী গার্ডিয়ানকে বলেছেন, ‘শ্রমিকদের সাথে কারাগারে পশুর মতো আচরণ করা হয়।’

যদিও সৌদি কর্তৃপক্ষ এসব অভিযোগ অস্বীকার করে থাকে। তায়িব তার দুঃসহ অভিজ্ঞতার কথা জানিয়ে বলেন, প্রথম যে কারাগারে তাকে ৫ দিন রাখা হয়েছিল সেখানে প্রথম ২৪ ঘণ্টায় তাকে কোনো খাবার দেয়া হয়নি। যখন তিনি ও তার সাথের কয়েকজন খাবার দেয়ার জন্য পিড়াপীড়ি করছিলেন তখন তাদেরকে বাইরে বের করে পেটানো হয়। এরপর ৬ জনের জন্য এক প্লেট পাঠানো হয়!

তিনি জানান, মারধর করা ঘটনা খুবই স্বাভাবিক ঘটনা। অনেক সময় আমরা জানতাম না কেন আমাদেরকে পেটানো হচ্ছে। কোনো কারণ ছাড়াই মারতো। কিল-ঘুষি মারতে মারতে ক্লান্ত হলে লাথি দিতে শুরু করতো। মারধর যেন তাদের কাছে খেলাধুলার মতো।’

অন্য ভুক্তভোগীরাও একই রকম অভিজ্ঞতার কথা জানিয়েছেন। সৌদি কারাগারে ছিলেন এমন আরও একজন হলেন আবদুল রহিম সুফিয়ান। তিনি জানান, কারারক্ষীরা তাকে উল্টো করে শুইয়ে তার উপর হাঁটতো। এবং ‘কুকুর’ ‘জানোয়ার’ বলে ডাকতো।

Exit mobile version