ব্যর্থতার দায়ভার কার? কী করবে বিসিবি?
বিশ্বকাপে ব্যর্থতার দায় চাপানো নিয়ে চলছে রীতিমত এক অদ্ভুত খেলা। দায় কারও ঘাড়ে চাপাতে পারলেই যেন সমাধান হয়ে যাবে সব! বলির পাঁঠা বানানোর সংস্কৃতিতে কোচ, অধিনায়ক বা ক্রিকেটারদের উপর চলে আসে আতশ কাঁচ। তবে এবার বিশ্বকাপ ভরাডুবির পর উঠে এসেছে নতুন প্রশ্ন, বারবার এরকম পারফরমেন্সের কারণ হয়তো আরও গভীরে। পরিবর্তনের হাজারো কথা উঠে আসলেও আড়ালে থেকে যাচ্ছে ঘরোয়া ক্রিকেটের অন্ধকারের কথা। মাশরাফীও বলছেন, বিসিবিতে থাকা বাঁধাগুলো দূর করতে হবে দ্রুত।
১৪ বছর ধরে বিশ্বকাপের মূলপর্বে কোনো জয় পায়নি বাংলাদেশ। এই সহজ কথাটা একটু ভেবে দেখলেই যে কেউ বুঝতে পারবে, বৈশ্বিক আসরে বাংলাদেশের পারফরমেন্স ঠিক কতোটা সঙ্গীন। এ নিয়ে ভাবা এবং সমস্যার কারণ খুঁজে বের করে সমাধানের পন্থা নিয়ে ভাবার কাজটা অবশ্যই বোর্ডের, দলের ও টিম ম্যানেজমেন্টের। দিনের পর দিন গেছে, বিশ্বকাপের পর বিশ্বকাপ। এরমধ্যে সমাধান খুঁজে বের করার কাজ কিছুটাও হয়তো হয়নি। কারণ মাঠের খেলায় সেই প্রতিফলনের বেলায় যে কেবলই লবডঙ্কা! তবে গোড়াতেই গণ্ডগোল থাকলে আসরের নামই কেবল পাল্টাবে, ফলাফলে আসবে না কোনো পরিবর্তন। কারণ, অদ্ভুত এক বৃত্তে আটকে গেছে বাংলাদেশের ক্রিকেট।
তামিম বেশি ডট খেলেন বলে বাংলাদেশের ক্রিকেটে তাকে দিয়ে হবে না, এসব কথার পর তামিম নিজেই বলেকয়ে সরলেন। নাঈম-সৌম্য-লিটনের উপর আস্থা ছিল সবার। বিশ্বকাপের ব্যর্থতা শেষে এবার তাদেরও ছেঁটে ফেলার জন্য দিকে দিকে উঠছে কথা। আবারও তামিমকে ফেরানো নিয়েও হচ্ছে বিভিন্ন আলোচনা। এমন পরিস্থিতি এবারই প্রথম নয়। এমনটা আগেও হয়েছে বহুবার। একে দিয়ে হচ্ছে না, ওকে ফেরাও। তাকে বাদ দাও, আবার ওকে আনো- এই সার্কাসেই চলছে বাংলাদেশের ক্রিকেট। ওপেনাররা শুধু উদাহরণ মাত্র।
আদতে কোচ, অধিনায়ক, নির্বাচকের হাতে নেই কোনো বিকল্প, নেই লড়াই করার রসদ! তাই তো কখনো সৌম্য কখনো বা লিটনের উপর আস্থা রেখে পরের সিজনেই আবার বাদ দেয়ার ওঠে রব। তবু ক্রিকেটার তৈরি না হওয়া নিয়ে হচ্ছে না কোনো কাজ। তবে এটা বুঝতে সমস্যা পোহাতে হয় না যে, গলদটা গোড়াতেই। ক্রিকেটের অবকাঠামো যেমন ঠিক নেই, তেমনি গড়ে ওঠেনি উন্নত ক্রিকেটিং কালচার। প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে এখনও উইকেট নিয়ে হাহাকার চলে। নেই একাডেমি। নেই আধুনিক ইনডোর সুবিধা। বোর্ড সভাপতি নাজমুল হাসান পাপনও বেশ আন্তরিক। তবে ভূতটা কোথায় বিসিবিতে?
সাবেক অধিনায়ক মাশরাফী বিন মোর্ত্তাজা বলেন, এখনও যোগ্য মানুষরাই ক্রিকেট বোর্ডে বসে আছে। বেশ কয়েকজন সাবেক ক্রিকেটার আছেন যারা আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলেছেন। তাদের তিনজন ছিলেন জাতীয় দলের অধিনায়ক। পাপন ভাই নিজেও দারুণ আন্তরিক। তবে বাধাটা কোথায়? নিশ্চয়ই কোথাও না কোথাও বাধা আছে। সেই বাধার জায়গাগুলোকে সরিয়ে ফেলতে হবে এখুনি। যারা ক্রিকেট খেলেছে তারা বাধা না। যারা সুযোগ নিতে চায় বা সুযোগ সন্ধানী, তারাই বাধা। তাদেরকে খুঁজে বের করে সরিয়ে ফেলতে হবে। সেই কাজটা করতে হবে ক্রিকেট বোর্ডকেই। খেলোয়াড়রাই শুরু করুক এই কাজ।
কে না জানে, সেই বাধারাই গেল কয়েক বছর ঘরোয়া ক্রিকেটকে বানিয়ে ফেলেছে তাদের হাতের পুতুলে। কিংবা নির্বাচনের ট্রাম্পকার্ড হিসেবে তারা ব্যবহার করছে ঘরোয়া ক্রিকেটকে। সেই ট্রাম্পকার্ড দিয়ে হয়তো নির্বাচনে উৎরে যাওয়া যায়, কিন্তু ২২ গজের খেলায় সেই বাধা সৃষ্টিকারী মানুষদের লোভের বলি দিয়ে যাবেন ক্রিকেটাররা? এসব প্রশ্নের জবাব পরিষ্কার হওয়ার মাঝেই নিহিত, বাংলাদেশের ক্রিকেট কি কেবল বৈশ্বিক আসরে ব্যর্থই হবে নাকি সত্যিকার অর্থেই আসবে ইতিবাচক পরিবর্তন।
Leave a reply