পাথর খেকোদের থাবায় নিশ্চিহ্ন সিলেটের শাহ আরেফিন টিলার মাজার

|

মাহবুবুর রহমান রিপন, সিলেট:

পাথর খেকোদের থাবায় নিশ্চিহ্ন সিলেটের শাহ আরেফিন টিলার মাজার। মাজার থেকে তুলে নেয়া হয়েছে শতকোটি টাকার পাথর। শুধুমাত্র কেবল মাজারে থাকা কিছু গাছের গুড়ি টিকে আছে। পট পরিবর্তনের সুযোগে বেপরোয়া চক্রটি। এসব কার্যক্রমে হতাশ পরিবেশবাদীরা। তবে এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেয়ার আশ্বাস দিয়েছে প্রশাসন।

সিলেটের কোম্পানিগঞ্জের প্রাচীন ও ঐতিহ্যবাহী শাহ আরেফিন টিলা। শাহ আরেফিনের মাজার নামেও পরিচিত। সরকারি ওয়াকফ সম্পদে ইসি নম্বর-১৭২১০।

গত জুলাই’তে এমনই চিত্র ছিল টিলাটির

তবে আগস্টে পট পরিবর্তনের পর পাল্টে যায় দৃশ্যপট। শুরু হয় পাথর তোলার ধ্বংস যজ্ঞ। পুরো মাজার পেটে পুরে নিয়েছেন পাথর খেকোরা। শাবল দিয়ে খুচিয়ে খুচিয়ে পাথর তুলে নিশ্চিহ্ন করা হয়েছে কবর। কেবল মাজারের বড় গাছগুলোর গোড়া টিকে আছে।

পাথর খেকোরা পাথর তুলছেন

মাজার পরিচর্যাকারী লালু শাহ বলেন, এখানে না হলেও কমপক্ষে দুই-আড়াই কোটি টাকার পাথর বেষ্টিত। এখানে দুইটি মাজার ছিল। আসন ছিল মূলত হযরত শাহ বিন শাহ রহমতুল্লাহ আল্লাইহির ডানে এবং তার পাশেই ছিল মা বিন্দিয়ার রওজা।

পাথর তোলার কাজে কারা জড়িত এ ব্যাপারে তিনি বলেন, সবই জালিয়া পাড়ের থেকেই এই পাথর তোলার নেতৃত্ব চলছে। এর ভিতরে কিছু মানুষ আছে যারা মাজার বিরোধী- ইয়াকুব আলী, ইব্রাহীম, আলী হোসেন, মনির ও রফিক। খাদেম পরিবার যদি না থাকে তাহলে এটা ধ্বংস হয় কীভাবে?

যদিও পরিবেশবাদীরা বলছেন, যাদের রক্ষা করার দায়িত্ব ছিল তারা সেই দায়িত্ব পালনে উদাসীনতা দেখিয়েছেন। এতে, এই ঐতিহাসিক স্থাপনা বিলীন হয়েছে।

বেলার বিভাগীয় সমন্বয়ক শাহ শাহেদা বেগম বলেন, এটা দুঃখজনক হলেও সত্য যে আমাদের আজ এই অবস্থা দেখতে হচ্ছে। আমরা সংগ্রাম করে গেছি কিন্তু শাহ আরেফিন টিলা শেষ হয়ে গেছে। আমাদের পরবর্তী প্রজন্মনের জন্য এই পৃথিবীকে কি অবস্থায় রেখে যাচ্ছি। এজন্যই আমাদের এটা সংরক্ষণ করা উচিত।

সম্প্রতি সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, পাথর পরিবহন ঠেকাতে বসানো হয়েছে পুলিশি চেকপোস্ট। টিলায় টহল বাড়ানো হয়েছে। পুলিশ দেখেই পালাতে দেখা যায় পাথর খেকোদের। কঠোর ব্যবস্থা নেয়ার আশ্বাস প্রশাসনের।

পুলিশের উপস্থিতে পালিয়ে যাচ্ছেন পাথর খেকোরা

সিলেট পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মাহবুবুর রহমান বলেন, জেলা প্রশাসনকে অনুরোধ করেছি। তারা যাতে একজন ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগ করেন। তারাও আমাদেরকে অনেক সাহায্য করছেন এই বিষয়ে।

জেলা প্রশাসক (ডিসি) শের মাহবুব মুরাদ বলেন, পাথর ভাঙার (ক্রাশিং) মিল যেগুলো আছে। তাদের সঙ্গে আমরা আলোচনায় বসেছিলাম এবং তাদেরকে জানিয়েছি, স্থানীয় কোনো পাথর যাতে তারা না ভাঙে। বলা হয়েছে- ভারত থেকে যেসব পাথর আসে সেগুলো যাতে তাদের আওতায় নিয়ে আসে। স্থানীয়দের কাজ যেনো না করে।

উল্লেখ্য, হযরত শাহ জালালের সফর সঙ্গী ছিলেন ৩৬০ আউলিয়ার একজন হযরত শাহ আরেফিন। প্রায় ৭শ’ বছর আগে কোম্পানীগঞ্জের এই টিলায় বিশ্রামের জন্য আস্তানা গেড়েছিলেন তিনি।

/এসআইএন


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply