চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির ফাইনালে পাঁচ ‘সিক্রেট ফাইট’

|

মাহমুদুল হাসান ইমন:

আগামীকাল মাঠে গড়াচ্ছে বহুল আকাঙ্ক্ষিত চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির ফাইনাল ম্যাচ। রোববার (৯ মার্চ) দুবাই ইন্টারন্যাশনাল ক্রিকেট স্টেডিয়ামে ভারতের বিপক্ষে মাঠে নামবে নিউজিল্যান্ড।

চলতি টুর্নামেন্টের গ্রুপ পর্বে একবার মুখোমুখি হয়েছিল এই দু’দল। সেখানে ভারতের কাছে ৪৪ রানের ব্যবধানে হারে কিউইরা। এক দিনের ক্রিকেটে এ পর্যন্ত ১১৯ বার দেখা হয়েছে তাদের। সেখানেও এগিয়ে ভারত। রোহিতদের ৬১ জয়ের বিপরীতে নিউজিল্যান্ড জিতেছে ৫০টি ম্যাচে। একটি ম্যাচ ড্র ও সাতটি ম্যাচ বাতিলের খাতায়।

তবে ফাইনাল ম্যাচে যে কোনো পরিসংখ্যান চলে না, সেটা খুব সহজেই বলে দেয়া যায়। ক্রিকেটপ্রেমীরাও অপেক্ষায় আছেন দারুণ মাঠের লড়াই উপভোগ করার আশায়। আগামীকালের ম্যাচ শুরুর আগে দেখে নেয়া যাক, আসন্ন ফাইনাল ম্যাচে কোন ‘পাঁচটি ফ্যাক্টর’ ম্যাচের ব্যবধান গড়ে দিতে পারে।

১. ম্যাট হেনরি বনাম শুভমন গিল

টুর্নামেন্টের সর্বোচ্চ উইকেটশিকারি। ২০২৩ সাল থেকে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে সবচেয়ে বেশি উইকেট হেনরির। ৬৬ ইনিংসে নিয়েছেন ১৩৬ উইকেট।

মানে অনেক দিন ধরেই একইভাবে পারফর্ম করে যাচ্ছেন এই পেসার। তবে ফাইনালে ভারতের বিপক্ষে তাকে না–ও পেতে পারে নিউজিল্যান্ড। লাহোরে গত পরশু দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে সেমিফাইনালে কাঁধে চোট পেয়েছেন এই ডানহাতি পেসার।

টুর্নামেন্টে দারুণ ফর্মে রয়েছেন কিউই পেসার ম্যাট হেনরি। টুর্নামেন্টের সর্বোচ্চ উইকেটশিকারিও তিনি। ৪ ম্যাচে নিয়েছেন ১০ উইকেট।

অন্যদিকে ভারতীয় ওপেনার শুভমন গিলও রয়েছেন তুখোড় ফর্মে। চলতি বছরে দুটি শতকের পাশাপাশি অর্ধশতকও রয়েছে দুটি।

ফাইনালে তাই ফিট থাকলে হেনরি ও শুভমানের দ্বৈরথে চোখ থাকবে ক্রিকেট বোদ্ধাদের। এ পর্যন্ত হেনরির ৮১টি বল ফেস করেছেন গিল। রান করেছেন ৬২।

তবে আগের ম্যাচেই হেনরির বলে আউট হয়েছিলেন শুভমন। তাছাড়া ডানহাতি ব্যাটারদের ক্ষেত্রেও হেনরির গড় বেশ ভালো।

২. স্যান্টনার বনাম কোহলি

দুবাইয়ের পিচ ধীরগতির, স্পিনারদের জন্য সহায়ক। তাই মিচেল স্যান্টনারের নিখুঁত বোলিং এবং বৈচিত্র্য কিউইদের অস্ত্র হতে পারে। তার বোলিংয়ে ঘায়েল হতে পারেন ভিরাট কোহলি।

টুর্নামেন্টে স্পিনের বিরুদ্ধে কিছুটা ভুগতে দেখা গেছে কোহলিকে। যদিও পাকিস্তান এবং অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে ম্যাচ জেতানো ইনিংস খেলেছেন তিনি। তবে, নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে আগের ম্যাচে রান পাননি।

স্যান্টনারের বিরুদ্ধে কোহলির গড় ৬০-এর ওপর। পরিসংখ্যান অনুযায়ী, এ পর্যন্ত তাদের মুখোমুখি লড়াইয়ে ২৫৯টি বলের বিপরীতে ১৮০ রান করেছেন কোহলি। ১০৯টি ডট বল খেলেছেন।

তবে চার বার আউটও হয়েছেন স্যান্টনারের স্পিন ঘূর্ণিতে। ডানহাতিদের বিরুদ্ধে স্যান্টনারের গড় বেশ ভাল।

৩. বরুণ বনাম অল কিউই ব্যাটার

গ্রুপ পর্বের ম্যাচটিতে নিউজিল্যান্ডকে একাই ধসিয়ে দিয়েছিল ‘মিস্ট্রি স্পিনার’ বরুণ চক্রবর্তী। উইল ইয়াং, গ্লেন ফিলিপস থেকে শুরু করে ম্যাট হেনরি; পাঁচটি উইকেট নিয়ে একাই লণ্ডভণ্ড করে দিয়েছিলেন কিউইদের ব্যাটিং লাইনআপ। সে ম্যাচে ম্যান অব দ্য ম্যাচও হয়েছিলেন তিনি। তার ঘূূর্ণির আগুনে ২০৫ রানে গুটিয়ে যায় নিউজিল্যান্ড।

এরপর অস্ট্রেলিয়ার ম্যাচেও ২ উইকেট তোলেন এই ভারতীয় তুর্কি। স্কোয়াডে না থেকেও হঠাৎ সুযোগ পেয়ে তুফান ওঠানো বরুণে চোখ থাকবে ক্রিকেট বিশ্লেষকদের।

ফাইনালে তুরুপের তাস হতে পারেন তিনি। তাকে ঠেকাতে কিউইদের যে বেশ বেগ পেতে হবে, সেটা অনুমেয়। নিউজিল্যান্ডের কোচ গ্যারি স্টিডও হয়তো ‘ঈগলের চোখে’ নেড়েচেড়ে দেখছেন এই স্পিনারকে।

ফাইনাল যদি দুবাই ইন্টারন্যাশনাল স্টেডিয়ামে না হতো, তাহলে হয়তো ‘সিক্রেট ফাইটে’ বরুণের নাম আসতো না। তবে, দুবাইয়ের স্পিন সহায়ক ধীরগতির পিচে বরুণের সঙ্গে কিউই ব্যাটারদের লড়াই হবে যে বেশ উপভোগ্য, সেটা বলার অপেক্ষা রাখে না।

৪. জাদেজা বনাম উইলিয়ামসন

নিখুঁত লাইন ও লেন্থে ভারতীয় অলরাউন্ডার রবীন্দ্র জাদেজাও ম্যাচের আলো কেড়ে নিতে পারেন। মূলত নিউজিল্যান্ডের হয়ে দারুণ ফর্মে থাকা কেন উইলিয়ামসনের পরীক্ষা নেবেন তিনিই।

যদিও সাবেক এই কিউই ব্যাটার স্পিন খুব ভালো সামলাতে পারেন। তবুও লেফট আর্ম অর্থডক্স জাদেজার সামনে কতোটা সাবলীল থাকবেন, তা দেখার বিষয়। এক্ষেত্রে তার পরীক্ষা নিতে পারেন আরেক স্পিন অলরাউন্ডার আক্সার প্যাটেলও।

পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, ওয়ানডেতে এ পর্যন্ত আটবার মুখোমুখি হয়েছেন জাদেজা-উইলিয়ামসন। জাদেজার বিপক্ষে উইলিয়ামসনের গড় ৬৭। ২০৭ বলে ১৫৯ রান করেছেন। দু’বার আউট হয়েছেন।

বাঁহাতি স্পিনারদের বিরুদ্ধে উইলিয়ামসনের গড় যদিও বেশ ভালোই। ৬৬.২১ গড়ে ৬৭ ইনিংসে ৯২৭ রান করেছেন এই ব্যাটার। অন্যদিকে ডানহাতি ব্যাটারদের বিরুদ্ধে জাদেজার রয়েছে ১৮২টি উইকেট। তবে ভুলে গেলে চলবে না, আগের ম্যাচে কিন্তু বাহাতি আক্সার প্যাটেলের কাছে উইকেট বিলিয়েছিলেন উইলিয়ামসন। যদিও সেটি ছিল ম্যাচের শেষদিকে।

৫. শামি বনাম কিউই টপ অর্ডার

আইসিসির টুর্নামেন্ট মানেই ভারতীয় পেসার মোহাম্মদ শামির আগুন ঝড়ানো বোলিং। বিগ ম্যাচের খেলোয়ার শামি চোট থেকে ফিরে বর্তমানে ভারতের বোলিং ইউনিটের নেতৃত্বে রয়েছেন। যদিও নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে আগের ম্যাচে কোনো উইকেট নেই তার।

তবে ২০২৩ সালের বিশ্বকাপে সাত উইকেট ছিল এই ভারতীয় পেসারের। ফাইনালে তার প্রধান লক্ষ থাকবে কিউই ওপেনার উইল ইয়াং ও রাচিন রাবিন্দ্রার পাশাপাশি কেন উইলিয়ামসনের উইকেট তুলে নিউজিল্যান্ডের টপ অর্ডারে ধস নামানো।

অন্যদিকে কিউই ওপেনার রাচিন রাবিন্দ্রা ও কেন উইলিয়ামসন আছেন দারুণ ফর্মে। সেমিফাইনালে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে সেঞ্চুরি পেয়েছেন দুজনই। দুজনের খেলার ধরনও বেশ ভিন্ন। একজন খেলেন দেখেশুনে আরেকজন খেলেন প্রতিপক্ষ বোলারের ওপর ছরি ঘুড়িয়ে। তিন ম্যাচে ৭৫ এর বেশি এভারেজে ১০৩ স্ট্রাইকরেটে ২২৬ রান করে টপ টু-য়ে আছেন রাচিন। আর উইলিয়ামসন আছেন তালিকার নয় নম্বরে। ৪৭ গড়ে চার ম্যাচে তার রান ১৮৯।

তবে আরেক কিইউ ওপেনার উইল ইয়াং-ও শেষ ম্যাচে তার ঝলক দেখাতে পারেন। চলতি টুর্নামেন্টে তেমন পারফর্ম করতে না পারলেও চার ম্যাচে ৩৭ গড়ে তার নামের পাশে রয়েছে দেড়শ রান। হয়তো ফাইনালের জন্যই ব্যাটে ধার দিচ্ছেন এই কিউই ওপেনার।

/এমএইচ


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply