
নতুন স্যাটেলাইট ছবিতে ইরানের ফোর্দো ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ কেন্দ্রে চলমান কাজকর্ম দেখা যাচ্ছে, যেটি এক সপ্তাহ আগে ‘মার্কিন বি-২’ বোমারু বিমান দ্বারা আঘাতপ্রাপ্ত হয়েছিল।
রোববার (২৯ জুন) ম্যাক্সার টেকনোলজিস দ্বারা সংগৃহীত ছবিগুলোতে ‘গত সপ্তাহের বিমান হামলায় ফোর্দো জ্বালানি সমৃদ্ধকরণ কমপ্লেক্সের বায়ুচলাচল শ্যাফ্ট ও গর্তের কাছে ক্রিয়াকলাপ’ দেখা গেছে বলে সংস্থাটি জানিয়েছে।
ছবিগুলোতে দেখা যায়, ‘ভূগর্ভস্থ কমপ্লেক্সের উপরিতলের রিজের উত্তর শ্যাফ্টের পাশেই একটি খননযন্ত্র ও কয়েকজন কর্মী অবস্থান করছে। ক্রেনটি শ্যাফ্ট/গর্তের প্রবেশপথে কাজ করছে বলে মনে হচ্ছে।’
ম্যাক্সারের মতে, রিজের নিচে আরও বেশ কিছু যানবাহন দেখা গেছে, যা সাইটে প্রবেশের পথে পার্ক করা রয়েছে।
গত মাসে, ‘মার্কিন বি-২’ বোমারু বিমানগুলো ইরানের ফোর্দো ও নাতানজ পারমাণবিক স্থানে এক ডজনেরও বেশি বাঙ্কার-বাস্টার বোমা ফেলে। অন্যদিকে, একটি মার্কিন সাবমেরিন থেকে টমাহক মিসাইল ইরানের মধ্যাঞ্চলীয় ইসফাহান পারমাণবিক স্থাপনায় আঘাত হানে।
মার্কিন যৌথ চিফস অফ স্টাফের চেয়ারম্যান ড্যান কেইন জানান, ফোর্দোয় দুটি বায়ুচলাচল শ্যাফ্টকে লক্ষ্য করে মার্কিন ‘ম্যাসিভ অর্ডিনেন্স পেনিট্রেটর (এমওপি)’ বোমা ফেলা হয়েছিল।
গত সপ্তাহে পেন্টাগন ব্রিফিংয়ে তিনি বলেন, ফোর্দোতে ফেলা বেশিরভাগ বোমা ‘প্রধান শ্যাফ্টে প্রবেশ করে, সেকেন্ডে ১,০০০ ফুটের বেশি গতিতে কমপ্লেক্সের ভিতরে ঢুকে মিশন স্পেসে বিস্ফোরিত হয়েছিল।’
প্রাক্তন পারমাণবিক পরিদর্শক ও বর্তমানে ইনস্টিটিউট ফর সায়েন্স অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল সিকিউরিটির প্রধান ডেভিড অ্যালব্রাইট বলেন, শনিবারের (২৮ জুন) ফোর্দোর তোলা ছবিতে দেখা গেছে, ‘ইরানিরা ফোর্দো ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ কেন্দ্রে সক্রিয়ভাবে কাজ করছে।’
অ্যালব্রাইটের মূল্যায়ন অনুযায়ী, এই কার্যক্রমে ‘ক্রেটার পুন:পূরণ, ইঞ্জিনিয়ারিং ক্ষয়ক্ষতি মূল্যায়ন ও সম্ভাবত রেডিওলজিক্যাল নমুনা সংগ্রহ অন্তর্ভুক্ত থাকতে পারে। প্রধান শ্যাফ্টের উপরিস্থ ক্রেটারগুলো এখনও খোলা রয়েছে।’
তিনি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে পোস্ট করেন, ‘আমরা লক্ষ্য করেছি, ইরানিরা ফোর্দো ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ কেন্দ্রে কয়েক দিনের মধ্যে দ্রুত মেরামত করেছে। তবে, টানেল প্রবেশপথ পুনরায় খোলার কোনো চেষ্টার এখনও কোনো লক্ষণ নেই।’
রোববার (৩০ জুন) জাতিসংঘের পরমাণু নিয়ন্ত্রক সংস্থার প্রধান রাফায়েল গ্রোসি বলেন, ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচিকে সম্পূর্ণ ধ্বংস করতে মার্কিন হামলা ব্যর্থ হয়েছে এবং তেহরান ‘কয়েক মাসের মধ্যে’ ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ পুনরায় শুরু করতে পারে। এটি প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের দাবির বিপরীত, যিনি বলেছিলেন যে মার্কিন হামলা ইরানের পরমাণু উচ্চাকাঙ্ক্ষাকে ‘কয়েক দশক পিছিয়ে’ দিয়েছে।
আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থার (আইএইএ) মহাপরিচালক গ্রোসির মন্তব্য পেন্টাগনের ডিফেন্স ইন্টেলিজেন্স এজেন্সির প্রাথমিক মূল্যায়নের সাথে মিলে যায়। তাতে বলা হয়, গত সপ্তাহের মার্কিন হামলা ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচির মূল উপাদান ধ্বংস করতে পারেনি এবং এটি সম্ভবত কয়েক মাসের জন্য পিছিয়েছে।
চূড়ান্ত সামরিক ও গোয়েন্দা মূল্যায়ন এখনো না এলেও, ট্রাম্প বারবার দাবি করেছেন যে তিনি তেহরানের পারমাণবিক কর্মসূচিকে ‘সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস’ করেছেন।
/এআই



Leave a reply