
রিমন রহমান:
রাজধানীর সেগুনবাগিচা এলাকা। ঠিক ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি, ডিআরআই ভবনের সামনের দেয়ালের দিকে তাকালেই চোখ যেন আটকে যায়। দেয়াল জুড়ে নাম জানা-অজানা কতোই না সংবাদপত্র। নানা রং-এর হরফে লেখা দেশ-বিদেশের কতোই না সংবাদ। রোববার সকাল সাড়ে ১১টা। দেয়ালে লাগানো পত্রিকার দিকে মনোযোগী বেশ কয়েকজন পাঠক। সকলের মধ্যে থেকে দৃষ্টি আকৃষ্ট করেন একজন। চোখে কালো চশমা, পরনে সাদা শার্ট এবং লুঙ্গি পড়া বয়স্ক এক ব্যক্তি। দাঁড়িয়ে নয়, বসে প্রবল আগ্রহ নিয়ে কী জানি পড়ছেন। সকলের চেয়ে ভিন্ন ছিলেন তিনি। কারণ তার পত্রিকা পড়ার দৃশ্য ছিল ব্যতিক্রম। সংবাদ পড়া শেষ করে, উঠে দাঁড়িয়ে চশমাটি ভাজ করে, পাশে থাকা রিক্সার সিটের নিচে যত্নে রেখে দিলেন। 
কৌতূহলবশত সামনে গিয়ে দাঁড়ালাম। অনুসন্ধিৎসু মন নিয়ে, প্রথমে নাম জানতে চাইলাম। বললেন, আব্দুল হাই। বাড়ি কুড়িগ্রাম। স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন- এতো আগ্রহ নিয়ে পত্রিকা পড়েন? বললেন, দেশ-বিদেশের খবর জানাই উদ্দেশ্য। পত্রিকা যে পড়েন, পড়ালেখা কতোদূর? জানালেন, ১৯৮৩ সালে এসএসসি পাস করি, তারপর সীমাবদ্ধতার কারণে আর পড়ালেখা হয়নি। এখন রিক্সা চালাই। তারপর প্রশ্ন ছিল, পরিবার কি ঢাকায় থাকেন? বললেন, না। পরিবারের চার সদস্য চার জায়গায় থাকেন। বললাম, কে কোথায় থাকে? বললেন, আমি ঢাকায় রিক্সা চালাই। স্ত্রী কুড়িগ্রাম। বড় মেয়ে রংপুর। সে এবার এমবিবিএস পাস করেছে। এখন রংপুর মেডিকেল কলেজে ইন্টার্নশিপ করে। আর ছোট মেয়ে একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ালেখা করে। এমন সব বণর্না শুনে খানিকটা হতচকিতই হয়ে গেলাম। জানতে চাইলাম, বড় মেয়েতো ডাক্তার, তারপরও কেন রিক্সা চালান, এতো পরিশ্রমের কাজ! মৃদু হেসে উত্তর দিলেন, ইন্টার্ন করে মাসে ১২-১৩ হাজার টাকা পায়, এতে ওরই এখন চলে না। আর ছোট মেয়েটার জন্য মাসে চার হাজার টাকা দিতে হয়। সেই কারণে রিক্সা চালাই। তারপর তাড়াহুড়া করে, রিক্সা নিয়ে চলে গেলেন…। 
এই শহরে কোটি মানুষের ভিড়ে তিনি অনন্য উদাহরণ। সীমাবদ্ধতাকে জয় করে, সে উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। রাস্তায় দাঁড়িয়ে পত্রিকা পড়ার নেশা তার উন্নত মানসিকতারই প্রতিফলন। এই সমাজে এমন মানুষদের হয়তো তেমন সমাদর নেই। কিন্তু সামান্যে অসামান্য একজন আব্দুল হাই।
লেখক: সিনিয়র রিপোর্টার, যমুনা টেলিভিশন।
 
				
				
				
 
				
				
			


Leave a reply