আফনান পিয়াল, পাকিস্তান⚫
নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে বাংলাদেশ তখন ধুকছে। রাওয়ালপিন্ডি ক্রিকেট স্টেডিয়ামের যে সারিতে আমি বসেছিলাম, সেই সারির একদম শেষে একাকী বসেছিলেন একজন ইংলিশ ভদ্রলোক। দেশটার সাবেক অধিনায়ক নাসের হুসেইন ধারাভাষ্য দিতে যিনি রাওয়ালপিন্ডিতেই আছেন। ধারাভাষ্যের সময়টা বাদ দিলে, বাকিটা সময় নাসের প্রেসবক্সেই কাটিয়েছেন।
নাসেরকে দেখেই মনে পড়লো, আরে কিছুক্ষণ আগেই তো একটা স্টোরি করলাম, ইংল্যান্ড-পাকিস্তানের একটা ম্যাচ নিয়ে। সেই ম্যাচে ইংল্যান্ডের অধিনায়ক ছিলেন নাসেরই। সঙ্গে সঙ্গেই ছুটে গেলাম ইংলিশ কমেন্টেটরের কাছে। গিয়ে খুলে বসলাম কথার ঝুলি। শুরুটা হায়-হ্যালো দিয়ে হলেও, আসল প্রসঙ্গে আসতে সময় নিলাম না।

বছর পঁচিশ আগের ঘটনা। ২০০০ সালের ৩০ অক্টোবর; সিরিজের শেষ ওয়ানডেতে মুখোমুখি ইংল্যান্ড-পাকিস্তান। যে জিতবে, সিরিজ তার। এমন মহাগুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে দর্শকদেরও ছিল উপচে পড়া ভিড়। করাচিতে সিরিজের প্রথম ওয়ানডেতে টিকিট না পেয়ে দর্শকরা উত্তেজিত হয়ে পড়েছিল। সেই ধারাবাহিকতা ছিল পরের দুই ম্যাচে, লাহোরে এবং রাওয়ালপিন্ডিতে।
রাওয়ালপিন্ডি যেন সবকিছুই ছাড়িয়ে গিয়েছিল। কাউন্টারে টিকিট ছিল না। সব টিকিট ছিল কালোবাজারিদের হাতে। ক্ষুব্ধ দর্শকরা এরপর টিকিট ছাড়াই মাঠে প্রবেশের চেষ্টা করে। সেসব দর্শকদের আটকও করে পুলিশ। পরিস্থিতি নাগালে না থাকায় বাধ্য হয়ে লাঠিচার্জ করা হয়, নিক্ষেপ করা হয় টিয়ার গ্যাস।
প্রতিবাদে দর্শকরা আবার পাথর মারতে থাকে! পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে মাঠের আশপাশের রাস্তা বন্ধ করা হয়। এতে করে আবার টিকিট হাতে থাকা দর্শকরাও মাঠে ঢুকতে পারেননি!
এই ঘটনা ম্যাচেও প্রভাব ফেলে। আগে ব্যাট করা ইংল্যান্ডের ক্রিকেটাররা বারবার অস্বস্তিতে পড়েছেন কাঁদানে গ্যাসের কারণে। বারকয়েক তারা বসে পড়েছেন, ছন্দে ফেরার চেষ্টা করেছেন। কিন্তু লাভ হয়নি। ফলও তাই নিজেদের হয়নি। মাত্র ১৫৮ রানে অলআউট হয় ইংল্যান্ড।
সেই ম্যাচটা খেলেছিলেন বাংলাদেশ দলের এখনকার স্পিন বোলিং কোচ মুশতাক আহমেদ। সাবেক স্পিন বোলিং কোচ সাকলাইন মুশতাক আবার পাঁচ উইকেট নিয়ে ম্যাচসেরা হন। সেই ম্যাচে ইংল্যান্ডের অধিনায়ক ছিলেন নাসের হুসেইন।
নাসের প্রথমে এসব মনে করতে পারছিলেন না। অভিব্যক্তি এমন, ‘এত ঘটনা ঘটলো কখন?’ গল্প এগুচ্ছে, আস্তে আস্তে একটু করে মনে পড়ছে তার। পুরোটা মনে পড়েছে, যখন তাকে ঐ ম্যাচের ছবিগুলো দেখালাম। চোখে-মুখে তখন পুরনো স্মৃতি রোমন্থনের উচ্ছ্বাস।
জীবনে এমন কত ভুলে যাওয়া গল্প থাকে আমাদের। স্মৃতির ধুলো কেউ উড়িয়ে দিলে, পরিষ্কার হয়ে যায়। বিস্মৃতির অতল গহ্বর থেকে ফিরে আসে মুছে যাওয়া দিনগুলি।
/এমএমএইচ
Leave a reply